• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    ঢাকা -দিল্লির সম্পর্কে টানাপড়েন

    ছাত্র-জনতার বিদ্রোহের মুখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। দেশব্যাপী সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সামরিক বিমানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি যখন প্রথমে নয়াদিল্লির বাইরে হিন্দন বিমানবন্দরে অবতরণ করেন, তখন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যান। এখন শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে দেশটির সরকার সম্ভবত তাকে সেই আশ্রয় দেবে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের

    অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে।

    শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ভারতের মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার পতনের কয়েক সপ্তাহ পরও বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ক্রমবর্ধমান আহ্বান থেকে শুরু করে নয়াদিল্লি ভিসা ও পানি ব্যবহার করে বাংলাদেশকে টার্গেট করছে এমন অভিযোগ, বাংলাদেশি জনগণ ভারতের প্রতি ক্রমশ ক্ষুব্ধ হচ্ছে।

    বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় দল ও ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেন। বড় প্রতিবেশী হওয়ায় সম্পর্কের চলমান উত্তেজনা বাংলাদেশেরও গুরুত্ব পাচ্ছে। উদ্বেগ আছে। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হওয়া উচিত জনগণকেন্দ্রিক। বিশ্লেষকরা বলছেন, একক বড় প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা উচিত। তবে তারা মনে করেন, বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নে ভারতেরও নজর দেওয়া উচিত।

    ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জোরালো হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করে বিচার করতে হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও এ দাবির প্রতিধ্বনি করেছেন। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লাল পাসপোর্ট (কূটনৈতিক পাসপোর্ট) বাতিল করেছে সরকার। ফলে শেখ হাসিনা বৈধভাবে ভারতে কতদিন থাকতে পারবেন তা স্পষ্ট নয়। ভারত সরকারও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

    সম্প্রতি দেশটির পূর্বাঞ্চলে বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গোমতী নদীর উজানে অবস্থিত দুম্বুর বাঁধ ইচ্ছাকৃতভাবে খোলার কারণে এই বন্যা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন এক বিবৃতিতে বলেছিল যে অত্যধিক বৃষ্টিপাত এবং বাঁধের নিচের দিকে বড় জলাধার থেকে পানি আসার কারণে এই বন্যা হয়েছে। প্রণয় ভার্মা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার। ইউনূসকে বলা হয়, পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত অতীতের মতো প্রতিবেশী দেশটিতে পানি ছাড়ার বিষয়ে কোনো সতর্কতা জারি করেনি। এই সতর্কতা মৃত্যু ও ধ্বংস রোধে সাহায্য করতে পারত।

    এ ছাড়া শেখ হাসিনার পতনের পর ভারত ক্রমাগত দাবি করে আসছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে সংখ্যালঘুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। সে সময়, সরকার ভারতীয় মিডিয়ার সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের কভারেজকে মিথ্যা বলে সমালোচনা করেছিল। দুই দেশের সীমান্ত হত্যার ঘটনা বারবার আলোচনায় এসেছে। আজও সীমান্ত হত্যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কান্তিভিটা সীমান্তে গতকাল ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে জয়ন্ত কুমার সিং নামে ১৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়েছে। চলতি মাসের ৯ তারিখে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশের দুই কিশোর নিহত হয়।

    পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হুসেন বলেন, “সীমান্তে যখন একজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, তখন সারা দেশে প্রতিক্রিয়া হয় এবং সেটি একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, যা আমরা চাই না।” সীমান্ত হত্যা দুই দেশের সুসম্পর্কের পথে বাধা। দুই দেশের মধ্যে বাংলাদেশ কী ধরনের সম্পর্ক চায় জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা অবশ্যই ভালো সম্পর্ক চাই। আমরা সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে (সম্পর্ক) চাই।