ঢাবি ছাত্র সাম্য হত্যা মামলায় ৩ জন গ্রেপ্তার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের ছাত্র এবং স্যার এ.এফ. রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার সাম্য (২৫) হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে।
বুধবার (১৪ মে) সকালে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর জানান, তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সকালে নিহতের বড় ভাই শরিফুল ইসলাম হত্যা মামলায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শাহবাগ ডিএমপির শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন। এর আগে, মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে রাজধানীর রাজাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) এবং যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮) ডাসার থানার বাসিন্দা।
ঘটনার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম রাতে জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কালীমন্দিরের কাছে সাম্যর উপর তিন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হামলা চালায়। হামলাকারীরাও আহত হয়। তারা একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আরেক যুবক পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে রমনা কালীমন্দিরের কাছে মারামারি শুরু হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। বিস্তারিত জানার জন্য পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
নিহত সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের স্যার এএফ রহমান হলের সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই ছাত্রদলের নেতা-কর্মীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জড়ো হতে শুরু করে। মধ্যরাতেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং প্রাঙ্গণে নেতা-কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত সামিয়ার বন্ধু বায়েজিদ জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহরিয়ার আলম সামিয়া, বায়েজিদ আবদুল্লাহ এবং রাফি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন রমনা কালী মন্দিরের গেট দিয়ে মোটরসাইকেল ছেড়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় তাদের মোটরসাইকেলটি অন্য একটি মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, অন্য মোটরসাইকেলের আরোহী উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তার সাথে থাকা আরও ১০-১২ জন চারটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন। সামিয়া এবং তার বন্ধুদের সাথে তাদের তর্কাতর্কি হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় সামিয়ারা হতবাক হয়ে যায়। দলের সবাই সামিয়াসকে মারধর শুরু করে। মারামারির এক পর্যায়ে তাদের একজন সামিয়াকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। দুই বন্ধুও আহত হয়।
বায়েজিদ বলেন, দলের কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নয়। তাই তাদের কাউকেই তারা শনাক্ত করতে পারেনি। তবে একজনকে আটক করা হয়েছে। সামিয়ার অবস্থার অবনতি দেখে তারা তাকে সেখানে উপস্থিত লোকজনের হাতে তুলে দেয় এবং সামিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যায়। পরে জানা যায় যে তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সামিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।