পুরুষোত্তম_সুফি_মিজানুর_রহমান নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
পিএইচপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দার্শনিক শিল্পপতি সুফি মিজানুর রহমানের ওপর আমি একটি নিবন্ধ তৈরি করতে গিয়ে সেটি খুব বড় হয়ে যায় এবং পত্রিকায় দিতে যেয়ে ধাক্কা খেলাম তাঁকে নাকি শেখ হাসিনাসহ ২০১ জনের সঙ্গে কোন মামলায় জড়ো হয়েছে সে কারণে সাংবাদিকরা লেখাটি প্রকাশে সম্মত হলেন না। যে কারণে আমি নিবন্ধটি ফেসবুকে দিয়েছি, কিন্তু সেখানেও সমস্যায় পড়লাম, বৃহদায়তনের কারণে পুরো লেখাটি এক সঙ্গে দিতে পারলাম না। লেখাটি দু’ভাগ করে গতকাল অর্ধেক দিয়েছি, আজ বাকি অংশটা দিলাম। আমাদের দেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত। তন্মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রধান। এই দুটি ক্ষেত্রে বিরাজিত সমস্যা রাষ্ট্র সমাধান করতে পারছে না। এক্ষেত্রে ধনীদেরও কিছু করণীয় আছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চনে তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটিকে ৩০ শয্যায় উন্নীত করে আধুনিক চিকিৎিসার সমস্ত উপকরণ ও সরঞ্জাম দিয়ে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই হাসপাতালে পিএইচপি ফ্যামিলি ও রোটারি ক্লাব অব আগ্রাবাদের যৌথ উদ্যোগে দু’দিনের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প করে ঠোঁট ও তালুকাটা রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশনের সুযোগ দেয়া হয়। কাঞ্চন এলাকায় প্রথম বারের মত মানবতার সেবায় কল্যাণমূলক কার্যক্রমে সফল স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে। ঢাকায় ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুদের জন্য প্রথম পিএইচপি’র আর্থিক সহযোগিতায় পেডিয়ট্রিক আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর আগে চমেক হাসপাতালের নিউনেটাল ইউনিটে নবজাতকদের জন্য ও অপারেশন থিয়েটারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের (এসি) ব্যবস্থা করেছিলেন সুফি মিজানুর রহমান। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৮টি উন্নতমানের এগজস্ট ফ্যানেরও ব্যবস্থা করে দেন তিনি। মহিলাদের একলামশিয়া ওয়ার্ডেও সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। পিএইচপি ফ্যামিলি চট্টগ্রামে দু’টি এতিমখানার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করছে। এ ছাড়া লায়ন্স ও রোটারি ক্লাবের মাধ্যমে জনাব সুফি মিজান বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সাহায্য প্রদান করেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিদিন কত মানুষকে কত টাকা যে তিনি দান করেন সে হিসেব তিনি ছাড়া আর কেউ জানেনা। সেই প্রচলিত কথাটা তিনি মানেন যেখানে বলা হয়, ডান হাতে দান করলে নিজের বাম হাতটিও যেন জানতে না পারে। সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতেও অসংখ্য মানুষকে সাহায্য করেন তিনি। তাঁর কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়ে কেউ ফিরে এসেছে খালি হাতে এমন কোন দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না। সুফি মিজান জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য পিএইচপি ফ্যামিলির লভ্যাংশের একটি অংশ দিয়ে তাঁর নামে একটি ফাউন্ডেশন গঠন করেছেন। যেমন ভারতে আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশন, টাটা ফাউন্ডেশন বা আমাদের দেশে এ কে খান ফাউন্ডেশন। সুফি মিজান ফাউন্ডেশন থেকে গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রচারের জন্য জনাব সুফি মিজান পিএইচপির পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কোরান শরিফ ও স্ট্যান্ড বিতরণ কর্মসূচি চালু করেছে। সুফি মিজান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪০টি হাদিস সংকলিত করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। ছাত্রদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে পিএইচপি প্রবর্তন করেছে কোরানের আলো প্রতিযোগিতা। মানবকল্যাণে আত্মনিবেদিত এই ভালো মানুষটি মানুষের জন্য গড়ে তুলেছেন হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি। পিএইচপি’র চেয়ারম্যান জনাব সুফি মিজানুর রহমানের জীবন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করে ধন সম্পত্তি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সেই ধনসম্পত্তির একটি অংশ তিনি দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করছেন। তিনি অনেক দুঃস্থ ও গরিব মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যয়ভার তিনি বহন করেছেন এবং শিক্ষার বিস্তারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রামে বহু মাদ্রাসা নিয়মিত পরিচালিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি পাকিস্তানের মুলতান, হাজারা ও করাচির বিভিন্ন স্থানের এবং পাকিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, আরব ও তুরস্কের অনেক পির-দরবেশ তাঁর আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকেন। যাঁরা অসহায় এবং নিজ সামর্থে হজ্বে যেতে অক্ষম, এমন শতাধিক লোককে তিনি সম্পূর্ণ নিজ খরচে হজ্বব্রত সমাপন করার ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানেও এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। জনাব সুফি মিজান বিদ্বান মানুষ। তাঁর জ্ঞানী সংসর্গ ও জ্ঞানচর্চার কথা বলা হয়নি। অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ হলেও সুফি সাহেব বইপড়ায় কখনো বিরতি দেননি। বই পড়তে পড়তেই ধর্ম, দর্শন, অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানা হয়ে গেছে তাঁর। বইপড়ার পাশাপাশি জ্ঞানীগুণীদের সাহচর্য লাভের জন্য অব্যাহত প্রয়াসে তিনি সুফিতত্ত্বা জ্ঞানী ছৈয়দ আহমদুল হক, বহুমুখী প্রতিভার এক আশ্চর্য উদাহরণ শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ এ এ রেজাউল করিম চৌধুরী, দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম, গাউসুল আজম মাইজভান্ডারীর প্রথম খলিফা হযরত আবদুস সালাম ইছাপুরীরও সঙ্গ লাভ করে নিজের জ্ঞান জগতকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হন। আবদুল গফুর হালীসহ চট্টগ্রামে যাঁরা মরমী সঙ্গীত, লোকগানের চর্চা করেন, তাঁদের অনেকেরই তিনি পরম সখা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস’-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমকালীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক ও চিন্তাবিদ ড. মাহাথির মোহাম্মদ, বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী ও চিন্তানায়ক ড. এ পি জে আবদুল কালামকে ভাষণ দানের জন্য আমন্ত্রণ করে আনার মধ্যে জনাব সুফি মিজানের জ্ঞানস্পৃহা এবং জ্ঞানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে স্থাপিত আছে। জনাব সুফি মিজান একজন বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, আরবি, হিন্দি, ফার্সি ইত্যাদি ছয়/সাতটি ভাষায় কথা বলতে পারেন, অনর্গল বক্তৃতা করতে পারেন এবং লিখতে পারেন। জনাব সুফি মিজানুর রহমান তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে অনেক কীর্তিই স্থাপন করেছেন। তন্মধ্যে কোন্টা বড় কোন্টা ছোট সে হিসাব বের করা সত্যিই কঠিন। তিনি একজন কর্মবীর। শিল্পপতি সুফি মিজান, শিক্ষাব্রতী মিজান, দানবীর সুফি মিজান, সমাজসেবী মিজান, মানবপ্রেমী জনদরদী মিজান, শিল্পরসিক – সাহিত্যপ্রেমী-সুফিবাদী মিজান – কে যে কার চেয়ে বড় সেটা বলা মুস্কিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি বিশিষ্ট অবদান রেখেছেন । দেশের শিল্প-বাণিজ্যে জনাব সুফি মিজানের অবদান এবং শিক্ষা বিস্তার, মানবসেবা, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর ফিলানথ্রপিক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি এসেছে সরকারি ও বেসরকারি নানা পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তির মাধ্যমে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভ‚ষিত হন। ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতায় অসাধারণ নিষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যাওয়ার্ড পান। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাঁর অন্যান্য অবদানের জন্য দৈনিক পূর্বকোণ ও গ্রামীণফোন তাঁকে ‘চট্টগ্রামের গর্ব’ হিসেবে সম্মানিত করে। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণের অসাধারণ স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর হাত থেকে ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার’ উপাধি লাভ করেন আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামে ইন্দোনেশিয়ার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রাম আল্লামা রুমি সোসাইটি এবং সুফি মিজান ফাউন্ডেশন-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রাম টেলিভিশনে ‘ইসলাম: একটি ধর্ম ও তার দার্শনিক ব্যাখ্যা’ এবং এটিএন বাংলায় ‘তাসাউফ’ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আলোকিত করেছেন। তিনি একসময় রোটারি ক্লাব অব আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম-এর সভাপতি ছিলেন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল-এর আজীবন সদস্য এবং পল হ্যারি’স ফাউন্ডেশন-এর (রোটারি ইন্টারন্যাশনাল) একজন ফেলো। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এর (আইইউবি) একজন প্রতিষ্ঠাকালীন পৃষ্ঠপোষক, যা শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর নিষ্ঠার প্রতিফলন। এসব সম্মান ও পদকে তিনি তাঁর জীবনব্যাপী নিষ্ঠা, নেতৃত্বগুণ এবং মানবিক মূল্যবোধের জন্য স্বীকৃত হয়েছেন। তবুও যদি জনাব সুফি মিজানের কোন একটি কর্মকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দান করতে হয়, তাহলে আমি বলবো, জনাব সুফি মিজানের পরিবারই জাতির প্রতি তাঁর শ্রেষ্ঠ উপহার। তাঁর হীরের টুুকরো সাত পুত্র যেন সপ্তরথী। প্রত্যেকেই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে পৈতৃক ব্যবসায় নিয়োজিত হয়েছেন। বাংলাদেশে এমন একটি পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা জানি না, যে পরিবারে প্রত্যেকে সদস্যই একাত্মা, একাট্টা। তাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই, বিরোধ নেই; প্রত্যেক বিষয়ে তারা একে অপরের মত ও পথের অনুসারী। পিতামাতার সঙ্গে একই ছাদের নীচে একটি বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের মতোই মিলেমিশে থাকেন তাঁরা। তাঁর প্রথম ছেলে মোহাম্মদ মুহসিন, দ্বিতীয় ছেলে মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, তৃতীয় ছেলে আনোয়ারুল হক চৌধুরী, চতুর্থ ছেলে মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, পঞ্চম ছেলে আমীর হোসেন সোহেল, ষষ্ঠ ছেলে জহিরুল ইসলাম রিংকু, সপ্তম ছেলে আকতার পারভেজ হিরু। তাদের মা তাহমিনা রহমান। তাঁর সাতটি ছেলে প্রত্যেকেই আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সবাই দেশে ফিরে পিএইচপি ফ্যামিলির একেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেছেন। কিন্তু কেউই বিদেশে থেকে যান নি। তিনি নিজে একজন গ্র্যাজুয়েট।
পিএইচপিরনবীন মাঝি মোহাম্মদ আলী হোসেনে রুশি মোদির ছায়া
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা একটা বড় সমস্যা। ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থ উপার্জন বড় কথা নয়, আর্থিক ব্যবস্থাপনাই আসল কথা। টাকা-পয়সা ব্যাপ্তি যত বৃদ্ধি পায়, ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনও তত তীব্রভাবে অনুভ‚ত হতে থাকে। রতন টাটার পাশাপাশি রুশি সেদিকেও কিছু কৃতিত্ব দিতে হয়। পিএইচপির সূফি সাহেবের এসব কথা অজানা নয়। সে কারণে বহু কষ্টে গড়া তাঁর শিল্প সাম্রাজ্য যাতে ব্যবস্থাপনার অভাবে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়তে না পারে, সেজন্য তিনি আর্থিক শৃঙ্খলার প্রতিও কড়া নজর রেখেছেন। তাঁর চতুর্থ পুত্র আলী হোসেন সোহাগকে গ্রুপের হিসাব-কিতাব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ছে ভারতের বিখ্যাত টাটা গ্রুপের একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য এবং টাকা স্টিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনার পরিচালক রুশি মোদীর কথা। তিনি টাটা স্টিল লিমিটেডের সবচেয়ে উদার প্রকৃতির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁর কার্যকালে ভাল কাজের জন্য তিনি অনেক কর্মচারীকে পুরস্কৃত করেছেন। এমনকি তিনি টাটা স্টিলের সমস্ত ডিভিশনাল ম্যানেজারকে বাতানুক‚ল মারুতি সুজুকি গাড়ি দেওয়ার মতো অনেক পুরস্কার শুরু করেছিলেন। টাটা ইস্পাত কারখানায় তিনি কখনও ধর্মঘটের মুখোমুখি হননি। কলকাতার বহুলপ্রচারিত দৈনিক আনন্দ বাজার পত্রিকায় একবার রুশি মোদীকে নিয়ে পত্রিকার পৃষ্ঠা জুড়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেই নিবন্ধ তাঁকে ব্যবস্থাপনার গুরু বা গুণিন বা ওঝা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেকালে মানুষের রোগ ব্যাধি হলে যেমন ওঝা বৈদ্যরা এসে ঝাড়ফুক করে গাছের লতা পাতা শিকড় বাকড় থেকে ওষুধ তৈরি করে রোগীকে সুস্থ করে তুলতেন, তেমনি রুশি মোদীও শিল্প কারখানার রোগবালাইয়ের ওঝা ছিলেন। টাটা স্টিলের যে এত নাম, তা রুশি মোদির কারণেই হয়েছে। তিনিই প্রকৃত স্টিল জায়ান্ট। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রুশি মোদী টাটা ইস্পাত কারখানা থেকে অবসর নেন। অবসর নেওয়ার পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী পিভি নরসিমা রাও তাঁকে ভারতীয় এয়ারলাইন্স এবং এয়ার ইন্ডিয়ার যুগ্ম চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করেন। পিএইচপি’র নব নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগের মধ্যেও আমি রুশি মোদীর ছায়া দেখতে পাচ্ছি। তিনি শেষ পর্যন্ত নিজেকে মোদীর পর্যায়ে উন্নতি করতে পারবেন কি না সেটার দেখার জন্য আমরা তাকিয়ে আছি। তবে ওই যে মর্নিং শোজ দ্য ডেজ বলে যে কথা চালু আছে, জনাব মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ ভবিষ্যতে যে মধ্য গগনে নবীন মার্তন্ডের দীপ্তি ছড়িয়ে দিগবলয় উদ্ভাসিত করে তুলবেন, শুরুতেই তার প্রমাণ দিয়েছেন। মোহাম্মদ আলী হোসেন ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁকে পিএইচপি পরিবারের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তাঁর জ্ঞান, দক্ষতা এবং বিস্তৃত অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে ব্যবসার প্রতিষ্ঠার ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন। তিনি ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা ব্যবস্থাপনায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জনশেষে তিনি পিএইচপির আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন, যাতে সিস্টেমের ক্ষতি এবং আর্থিক ফাঁকি রোধ করা যায়। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য, ক্রয়, বিমা, ট্রেড ফাইন্যান্স, আন্তর্জাতিক ব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর শৃঙ্খলা এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। তার সরাসরি দিকনির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধানে এসব বিষয় দক্ষভাবে পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া তিনি কাব্য, সঙ্গীত ও সামাজিক কর্মকাণ্ড আগ্রহী। তিনি পিএইচপি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেন ‘দৈনিক আমাদের সময়’ এবং ‘দ্য বিজনেস পোস্ট’-এ, তিনি পল হ্যারি’স ফাউন্ডেশন -এর ফেলো, যা রোটারি ইন্টারন্যাশনাল-এর সাথে যুক্ত, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন: মুসলিম ছাত্র সমিতির সভাপতি (২০০১ ও ২০০২), বিদেশী ছাত্র সংগঠনের সহসভাপতি (২০০১ ও ২০০২), বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনের সদস্য (২০০২), ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-এ (ইউআইটিএস) ট্রাস্টি সদস্য, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম কিডনি ফাউন্ডেশনের দাতা সদস্য, আল্লামা রুমি সোসাইটির সাধারণ সদস্য, শাহীন গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবের সদস্য, চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের সদস্য, চট্টগ্রাম খুলশি ক্লাব লিমিটেডের সদস্য। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং বিনোদনমূলক ক্লাবগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকেন।