প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফর জ্বালানি সহায়তার উপর আলোকপাত করবে
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাতার সফরে দেশটির সাথে অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সহযোগিতা জোরদার করার উপর আলোকপাত করা হবে। একই সাথে, দুর্নীতি, খুনের মামলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘প্রত্যাবাসন’ চাওয়া হবে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ কথা বলেন।
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে ‘অর্থনীতি শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫’-এ যোগদানের জন্য চার দিনের সফরে দোহা গেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ২২ ও ২৩ এপ্রিল তিনি দোহায় একটি ব্যস্ত দিন কাটাবেন। অন্যান্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ।
শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ‘আর্থানা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এ ভাষণ দেবেন। সফরকালে তাঁর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে। তিনি বলেন, ড. ইউনূসের কাতারের আমির ও উপ-প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদের সাথে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা কাতার চ্যারিটি এবং কাতার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন এবং কাতার-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল ‘আল জাজিরা’-কে সাক্ষাৎকার দেবেন। এলএনজি আমদানির বিষয়ে কাতারের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রয়েছে। তাই, বৃহত্তর জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, ২৩ এপ্রিল একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন হবে, যেখানে বাংলাদেশ ইতিবাচক সাড়া আশা করছে।
এছাড়াও, ভিসা ইস্যু নিয়ে আলোচনা এবং রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে একটি সেমিনার হবে। অধ্যাপক ইউনূস সেমিনারে নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্ব অংশীদাররা সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশ্বে ফিরিয়ে আনা হবে। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ২৫ এপ্রিল ভোররাতে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘প্রত্যাবাসন’ দাবি প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, “যারা অভিযুক্ত, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং খুনের মামলা রয়েছে। আমরা তাদের ব্যাপারে গুরুতর এবং আমরা প্রত্যেকের প্রত্যাবাসনের দাবি করব। তাদের বাংলাদেশের আইনের মুখোমুখি হতে হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং পরবর্তী সরকারের দায়িত্ব।”
বিদেশে পালিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ নেতার হাতে ‘রক্ত লেগে আছে’ বলে অভিযোগ করে শফিকুল আলম বলেন, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। তারা বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত।
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতি ইসলামপন্থী দলগুলোর আপত্তির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, প্রতিবেদনটি ঐক্যমত্য কমিশনে যাবে; তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবে। কারণ অনেক বিষয় রাজনৈতিকভাবে আলোচনা সাপেক্ষ। প্রতিবেদনের কতটা আমরা গ্রহণ করব বা করব না তা রাজনৈতিক দলগুলোই নির্ধারণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।