বজ্রপাতের আশঙ্কা বাড়ছে, বছরে ৩০০ জনের প্রাণহানি ঘটছে।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও বজ্রপাতের আশঙ্কা এখনও কমেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর, দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ফোরামের তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে সর্বাধিক সংখ্যক বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর পাশাপাশি, বজ্রপাত মোকাবেলায় সারা দেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শও তারা দিয়েছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আবহাওয়ার ধরণ অনুসারে এপ্রিল, মে, জুন এবং জুলাই মাসকে বজ্রপাতপ্রবণ মাস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই চার মাসে, বড় আবাদের বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি নিয়ে হাওর এবং অন্যান্য এলাকায় কৃষিকাজ করে।
আবহাওয়া অফিস বলছে যে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগাম বার্তা পাঠানো হয়। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, মোবাইল ফোনে নিয়মিত সতর্কতা বার্তা পাঠানো হচ্ছে। তাই, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না হলে ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়াও, যদি প্রচুর বজ্রপাত হয়, তাহলে একই ঘরে না থেকে সকলের আলাদা ঘরে থাকা উচিত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘ডিজাস্টার ফোরাম’-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা গড়ে ২৯৬ জন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই কৃষক। সংস্থার মতে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে বজ্রপাতে ৪,১৫৭ জন মারা গেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে পরিবেশগত বিপর্যয় এবং বনভূমি হ্রাসের কারণে বজ্রপাতে ঝুঁকি বাড়ছে। তারা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছেন।
তবে প্রশ্ন হলো, মাঠে কাজ করা কৃষকদের জন্য মোবাইল ফোনে পাঠানো টেক্সট বার্তা কতটা কার্যকর, কারণ অনেকেই নিরক্ষর? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বজ্রপাতে আক্রান্ত এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা ও প্রচারণা চালানো উচিত। এছাড়াও, সর্বত্র বজ্রপাত প্রতিরোধক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের জনবল বৃদ্ধি করে তাদের শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বজ্রপাতে ১২৩ জন এবং ২০২০ সালে ৩৮১ জন মারা গেছেন, যা তিনগুণেরও বেশি। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা তিনগুণের কাছাকাছি হবে। ইতিমধ্যে, দেশের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বজ্রপাত প্রতিরোধক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে, যাতে হতাহতের ঘটনা কমানো যায়।