মায়ের কোল থেকে শিশু কন্যাকে ছিনিয়ে নিয়ে ১.৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দিলেন বাবা
পারিবারিক বিরোধের জের ধরে কাইয়ুম বিশ্বাস নামে এক যুবক তার স্ত্রীকে নির্যাতন, মৌখিকভাবে তালাক, ৮ মাসের শিশু কন্যাকে ছিনিয়ে নেওয়া এবং ১.৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুটি ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় শিশুটির মা পপি বেগম ফরিদপুরের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করেছেন। এই মামলায় স্বামী কাইয়ুম বিশ্বাস (৪০), তার তিন বোন মিতা আক্তার, বুলি বেগম, সাগরী আক্তার এবং আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে মা পপি বেগম তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে বহুবার থানা ও আদালতে গিয়েছেন। আদালতের প্রতিবেদন এবং শিশুটিকে খুঁজে বের করার নির্দেশ সত্ত্বেও, পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি। মঙ্গলবার (৬ মে) নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফর আলী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আদালত আজ আমাদের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ চলছে। কিন্তু বিক্রির জন্য অভিযোগে দেওয়া ঠিকানায় শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। শিশুটি পাওয়া গেলে আদালতে পাঠানো হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশুটিকে মা অথবা বাবার কাছে পাঠানো হবে।
জানা যায়, তিন বছর আগে মুকসুদপুর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের হান্নান সরদারের মেয়ে পপি বেগম পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুটি ইউনিয়নের রামপাশা গ্রামের মানিক বিশ্বাসের ছেলে কাইয়ুম বিশ্বাসকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক কলহ চলছিল। এরই মধ্যে তাদের একটি মেয়ের জন্ম হয়। পরে কলহের জের ধরে পাঁচ মাস আগে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
ভুক্তভোগী পপি বেগম জানান, বিবাহবিচ্ছেদের সময় তার স্বামী জোর করে তার শিশু তানহাকে কোল থেকে কেড়ে নেয়। পরে, তার স্বামী শিশুটিকে একই উপজেলার শাখরাইল গ্রামের কুবাদ শেখের মেয়ে কোহিনুর বেগমের কাছে ১৫০,০০০ টাকায় বিক্রি করে দেন। আর এই বিক্রির মধ্যস্থতা করেন নগরকান্দার দলিল লেখক আলমগীর তালুকদার।
পপি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার সন্তানকে দেখার জন্য আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না। আমার পেট শুকিয়ে গেছে। আমি এমনকি সেই মায়ের পা ধরে আছি যার কাছে মেয়েটি বিক্রি হয়েছিল, কিন্তু সে এখনও আমাকে তাকে দেখতে দিচ্ছে না। তারা বলে – আমরা তাকে দেড় লক্ষ টাকায় কিনেছি, যে তাকে বিক্রি করছে তার কাছে যাও।”
কাইয়ুম বিশ্বাসের বোন মিতা আক্তার ঘটনাটি সম্পর্কে তাকে একাধিকবার ফোন করলে, অন্য একজন নিজেকে মিতার স্বামী পরিচয় দিয়ে ফোন কেটে দেন এবং ব্যস্ত থাকার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এদিকে, শিশুটির বাবা কাইয়ুম বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।