• বাংলা
  • English
  • জাতীয়

    সরকারি দলগুলো বলছে বৈশ্বিক সংকট, বিরোধী দল বলছে দুর্নীতি

    দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যাতে দুর্ভোগে না পড়ে সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করছে। করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছে দেশটি। উন্নত দেশগুলোও বিপদে পড়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের অন্য সদস্যরাও বলেছেন, যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সংকটের কারণে দেশীয় বাজারে বর্তমান এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা সরকারের ভুল নীতি, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন। তারা বলেন, সরকারের কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দলগুলোর সংসদ সদস্যরা সমালোচনায় অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে সংকট উত্তরণে সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

    জাতীয় পার্টির সদস্য ও দলের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হকের আনা প্রস্তাবের ওপর সংসদে আলোচনা হয় ১৪৭ বিধিতে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঙ্কট মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোও মিতব্যয়ী হয়ে উঠছে। জার্মানি, ব্রিটেনেও খারাপ অবস্থা। এখন তারা ভাবছেন শীতে কী করবেন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল ও সারের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ব্যবস্থা নিতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পরপরই দাম বাড়ানো হলে দাম আরও অনেক বাড়াতে হতো। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি নজরদারি রয়েছে। সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পের সংখ্যা, অর্থনৈতিক গতিশীলতা এবং প্রকল্পের ‘রিটার্ন’ প্রথমে দেখা হয়। তার সরকার মোটা কমিশনের কোনো পরিকল্পনা নেয়নি।

    সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, তার কাছে ক্ষমতা মানেই দেশের মানুষের সেবা করা; লুটপাট, দুর্নীতি কারো ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় রাজনীতি ও অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি ছিল নাজুক। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ কাতারে গেলে করোনার কারণে বিশ্ব মন্দা দেখা দেয়। যখন প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে ফিরে আসতে শুরু করে, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়; সব দেশকেই সংকটের মুখে পড়তে হয়। আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ডাল, চিনিসহ অনেক কিছু আমদানি করতে হয়। একই পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে এখন আগের তুলনায় ৯ বিলিয়ন বেশি খরচ হচ্ছে।

    শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় অস্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপের বৃহৎ অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ইউরোজোনের মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের সর্বোচ্চ। ব্রাজিলে ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জাপানেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি আগে সেখানে লাল ছিল। ইউরোপে গ্যাস, বিদ্যুৎ এমনকি পানিও রেশন করা হচ্ছে। জাপান, চীনে লোডশেডিং হচ্ছে।

    রিজার্ভ নিয়ে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো অর্থ থাকলে বৈদেশিক রিজার্ভ ঝুঁকিমুক্ত বলে বিবেচিত হয়। পাঁচ-ছয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য দেশের মজুদ রয়েছে। কোনো হতাশা ছিল না। বাংলাদেশ সময়মতো সব ঋণ পরিশোধ করেছে। বাংলাদেশ কখনো খেলাপি হয়নি; ঘটবেও না।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউক্রেন-রাশিয়া আজ বিপদে পড়েছে। চালসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। সেটা বুঝতে পেরে তিনি নিজেই সব বাতি জ্বালান না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি অনেক কাজ পরিচালনা করেন। মানবকল্যাণই তার কাছে সবচেয়ে বড়। মানুষ কষ্ট পেলে অন্তত অন্তরে ব্যথা অনুভব করে। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত না করার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি, রাশিয়ার ওপর ডলারের অবরোধসহ নানা কারণে বাজারে যে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ অন্যের দুর্ভাগ্যে নিজের ভাগ্য গড়তে চায়; বেশি মুনাফা অর্জন করতে চান। এ বিষয়ে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

    মন্তব্য করুন