অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সহায়তা দিতে চায় যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশ সরকার এ জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে চাইলে যুক্তরাজ্যও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তবে বাংলাদেশ বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনেরও যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপ শেষে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
প্রায় দুই বছর পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন বিষয়ক বিভাগের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি (পররাষ্ট্র সচিব) স্যার ফিলিপ বার্টন যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংলাপে।
ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সায়েদা মুনা তাসনিমসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে যে যুক্তরাজ্য অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করেছে যাতে বাংলাদেশীরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা করতে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। যুক্তরাজ্য মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
স্যার ফিলিপ বার্টন বলেন, এই সংলাপ বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের প্রতিফলন।
দুই দেশ অর্থনৈতিক, বাণিজ্য অংশীদারিত্ব এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায়।
এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু, চলাচল ও অভিবাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সাইবার নিরাপত্তা, সুশাসন, মানবাধিকার, নির্বাচন এবং প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। . উভয় পক্ষই তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে।
এই সংলাপে কয়েকটি কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে দুই দেশ শিগগিরই একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)’ স্বাক্ষর করবে।
কেন এসওপি স্বাক্ষর করতে হবে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সায়েদা মুনা তাসনিম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের এমন একটি এসওপি রয়েছে। ব্রেক্সিটের পর এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে বর্তমানে মাসে প্রায় তিন থেকে চারজনকে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরিয়ে আনতে হয়।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শিক্ষার্থী, শ্রমিকরা যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। এই সংখ্যা কীভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব বৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়। যুক্তরাজ্য এ লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের জন্য আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “যুক্তরাজ্য আমাদের পুরনো বন্ধু, দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী। তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনে আগ্রহী। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সহিংসতামুক্ত নির্বাচন দেখতে চায়। যাতে সবাই অংশগ্রহণ করে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও বলেছি যে আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আছে। সেটা নিয়েও আমরা কাজ করছি।
যুক্তরাজ্যের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ কীভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পরিচালনা করবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অংশগ্রহণের অর্থ অনেক। সবাই ভোট দেবে, এটাই অংশগ্রহণ। তবে কোন দল অংশগ্রহণ করবে কি করবে না সেটা তাদের ব্যাপার। প্রত্যাশা থাকতে পারে, সবাই থাকুক। আসল বিষয় হল জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।