জীবনযাপনের ধরন বদলে রোধ করা সম্ভব ৯০% স্ট্রোক
দেশে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। প্রতি হাজারে প্রায় আটজন নারী স্ট্রোকে ভোগেন। সেক্ষেত্রে প্রতি হাজারে পুরুষের সংখ্যা ১৪।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন পরিচালনার মাধ্যমে ৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুব দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনা জরুরি।
বিশ্ব স্ট্রোক দিবসকে সামনে রেখে শনিবার রাজধানীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালস (এনআইএনএস) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। সভা সংগঠিত করুন।
নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পরিচালক ও নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, “আমাদের দেশে গ্রামে স্ট্রোক বেশি হয় এবং শহরে কম। আমাদের জনসংখ্যা গ্রামে বেশি, তারা স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একবার স্ট্রোক হওয়ার পরে যত্ন প্রদানকারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।’
নিন্সের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, স্ট্রোক একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। ৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য।
এছাড়াও, স্ট্রোক একটি বিপরীত রোগ। প্রতি মিনিটে, স্ট্রোক রোগীর মস্তিষ্কে ১,৯ মিলিয়ন নিউরন মারা যায়। তাই স্ট্রোক রোগীদের জন্য প্রতি সেকেন্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘এমনকি ২০২১ সালেও আমাদের ছয়জনের মধ্যে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিল। আজ তা বেড়ে চারজনের মধ্যে এক হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ১১ জন (১১.৩৯) স্ট্রোকে আক্রান্ত।
এনআইএনএসের যুগ্ম পরিচালক ও নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ বদরুল আলম বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, প্রান্তিক পর্যায়েও। পর্যাপ্ত চিকিৎসক আছে।
তিনি বলেন, রোগীকে ঢাকায় না পাঠিয়ে চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, প্রস্রাব ও পায়খানা বন্ধ করা যায়, খিঁচুনি বন্ধ করা যায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবেই রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.মোহাম্মদ সেলিম শাহী বলেন, দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে স্ট্রোক মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগ। স্ট্রোকের পর রোগী হার্ট ইনস্টিটিউট বা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হয়, এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর ১৫ কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। পাঁচ মিলিয়ন মারা যায় এবং পাঁচ মিলিয়ন আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।
নিন্সের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহা জাহেদ হোসেন বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসার একটি বড় অংশ অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জড়িত। ইসকেমিক স্ট্রোকের বেশিরভাগ চিকিত্সা (মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা বা বাধার কারণে একটি স্ট্রোক) ওষুধের সাথে জড়িত। যদি রোগীকে চার ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে আনা যায়, তাহলে থ্রম্বোলাইসিস (ইনজেকশনের মাধ্যমে জমাট দ্রবীভূত করা) দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব।
নিন্সের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন খান বলেন, স্ট্রোক রোগীদের রক্তনালীর বড় অংশ ফেটে যায়। সেক্ষেত্রে, রোগীকে এমআরআই দ্বারা একটি হস্তক্ষেপমূলক পদ্ধতিতে আনা উচিত।
ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং নিন্সের নিউরোহ্যাবিলিটেশনের অধ্যাপক। খুরশীদ মাহমুদ বলেন, যখনই স্ট্রোক হবে তখনই পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু সেই মুহুর্তে আমরা যদি প্রতি দুই ঘণ্টায় রোগীকে পিছিয়ে দেই, তাহলে শয্যাশায়ী রোগীর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।
নিন্সের নিউরো-ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজীব নয়ন চৌধুরী বলেন, স্ট্রোক-পরবর্তী খিঁচুনি হতে পারে। এটি অবিলম্বে বা পরে হতে পারে। যাদের সাত দিন পর এটি হয়, তাদের দীর্ঘমেয়াদী খিঁচুনি ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।
নিন্সের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “স্ট্রোকের নিরাময়যোগ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল বা রক্তে খারাপ চর্বি, ধূমপান, মদ্যপান এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা হতে পারে। নিয়ন্ত্রিত
নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম বলেন, স্ট্রোক রোগীদের সুস্থতার ক্ষেত্রে সামাজিক সংহতি অপরিহার্য।
নিন্সের নিউরোলজির (ওএসডি) অধ্যাপক ড. আফজাল মমিন বলেন, চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলো আরেকটি স্ট্রোক প্রতিরোধ করা। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
কেএম মামুনুর মেডিক্যাল মার্কেটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট লিড ডাঃ রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের রশিদ টিটো বলেন, অ্যাক্টিলাইজ সারা বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রোকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু মানুষ এই ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন।