পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত এবং ১০.৫০% নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিমা প্রতিষ্টান পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর ৪০তম বার্ষিক সাধারণ সভা আজ সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এর সকল নিয়ম নীতি মেনে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোম্পানীর চেয়ারম্যান জনাব জাফর আহমেদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল কমিটির চেয়ারপার্সনগন, সকল পরিচালকবৃন্দ, সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষকে প্রতিনিধি, স্ক্রুটিনাইজার, ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসি এর অবজারভারগন এবং ২২০ এর অধিক শেয়ারহোল্ডারগণ ভার্চুয়াল লিংকের মাধ্যমে সভায় সংযুক্ত ছিলেন।
কোম্পানীর ভাইস চেয়ারপার্সন জনাব মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, পরিচালক জনাব আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, পরিচালক ও ইনভেস্টমেন্ট কমিটির চেয়ারপার্সন জনাব মোহাম্মদ আলী হোসেন, পরিচালক জনাব মোঃ ফরহাদ আহমেদ আকন্দ, জনাব সাইফুল আরেফিন খালেদ, জনাব কবির আহমেদ, মিসেস ফারজানা জাহান আহমেদ, জনাব মোঃ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী, জনাব মোঃ আজিজুল হক, ড. জোৎস্না আরা বেগম, জনাব মোহাম্মদ মিজান ভিক্টর মহসিন, স্বতন্ত্র পরিচালক ও রিস্ক ম্যানেজম্যান্ট কমিটির চেয়ারপার্সন জনাব দিলশাদ আহমেদ, স্বতন্ত্র পরিচালক ও পলিসিহোল্ডার প্রোটেকশন এন্ড কম্প্লায়েন্স কমিটির চেয়ারপার্সন জনাব এম.এম.জি. সারওয়ার, স্বতন্ত্র পরিচালক এবং অডিট ও নমিনেশন এন্ড রিমিউনারেশন কমিটির চেয়ারপার্সন জনাব পরায়ন চন্দ্র দেব বর্মন, উপদেষ্টা জনাব মোহাম্মদ হোসেন খালেদ, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব এস. এম. আজিজুল হোসেন, কোম্পানীর প্রাক্তন চেয়ারম্যানবৃন্দ শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরী ও আবুল বাশার মুকুল এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালন করেন কোম্পানী সচিব জনাব শেখ মোঃ সরফরাজ হোসেন এফসিএস। শেয়ারহোল্ডারগণ ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী, পরিচালনা পর্ষদের প্রতিবেদনমসূহ, ২০২৪ সালের জন্য ১০.৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন করেন। এছাড়াও পরিচালক নির্বাচন ও নিয়োগসহ ২০২৫ সালের জন্য সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক এবং কম্প্লায়েন্স নিরীক্ষক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন ও অনুমোদন করেন।
সভার শুরুতেই কোম্পানী সচিব সংযুক্ত পরিচালকসহ সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং সভায় ভোট প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় নির্দেশনাবলী তুলে ধরেন। দোয়া পরিচালনার পরপরই চেয়ারম্যান মহোদয় সভা পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করলে কোম্পানীর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং কোম্পানীর ওভারভিউ তুলে ধরেন। কোম্পানীর ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদনের পূর্বে অডিট কমিটির চেয়ারপার্সন শেয়ারহোল্ডারগণের উদ্দেশ্যে বলেন, শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। এ বছরে কোনও অতিরিক্ত সাধারণ ক্রিয়াকলাপ ঘটেনি এবং আর্থিক বিবরণীতে এ ধরনের কোন প্রতিফলনও পরিলক্ষিত হয়নি। বাংলাদেশের আ্যকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড ২৪ এর রিলাটেড পার্টি ডিসক্লোজারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সংজ্ঞা অনুসারে পিপলস্ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী তৃতীয় পক্ষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একই শর্ত অনুযায়ী এবং বাণিজ্যিক হারগুলিতে আর্ম লেনথ্ ভিত্তিতে পরিচালিত সকল পক্ষের সমস্ত লেনদেন পরিচালনা করে আসছে। ত্রৈমাসিক ও সমাপ্ত বছরের ফলাফলের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায়নি। কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রস্তুতকৃত আর্থিক বিবরণী, পরিচালনাগত ফলাফল, নগদ প্রবাহ এবং ইক্যুইটির পরিবর্তনের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে।
কোম্পানীর আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, চলতি বছরে সাধারণ রিজার্ভ তহবিল ২৭.৫ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৫.৫ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে। লাভ-ক্ষতি বরাদ্দ হিসাব ২.৯২ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৫২.৩৯ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। অগ্নি বীমা ব্যবসা তহবিলের স্থিতি ৮.৯১ মিলিয়ন টাকা বেড়ে ৫২.৯৪ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। নৌ বীমা ব্যবসা তহবিলের স্থিতি ১৯.১৪ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ১৫০.৯৬ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। মোটর বীমা ব্যবসা তহবিলের স্থিতি ২.০৪ মিলিয়ন টাকা হ্রাস পেয়ে ১৫.০৪ মিলিয়ন টাকায় নেমে এসেছে। বিবিধ বীমা ব্যবসা তহবিলের স্থিতি ০.৪৮ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৪.৪৯ মিলিয়ন টাকা হয়েছে।
গত বছর, ডিপোজিট প্রিমিয়াম ৭.৩২ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮.৫০ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে। এরপর বকেয়া বা অবহিত দাবির ক্ষেত্রে আনুমানিক দায় ২৩.৯৪ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৩২৬.৫৯ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। বীমা ব্যবসা পরিচালনাকারী অন্যান্য ব্যক্তি বা সংস্থা – সাধারণ বীমা কর্পোরেশন এবং অন্যান্যদের ক্ষেত্রে বকেয়া পরিমাণ ৯১.১৬ মিলিয়ন টাকা হ্রাস পেয়ে ২৪.০৯ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। বিবিধ দেনাদারদের পরিমাণ ১৯.২৭ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৬.৮৪ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদের প্রদেয় অদাবিকৃত লভ্যাংশ তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২.২৯ মিলিয়ন টাকা যা প্রতিবছর নিয়ম অনুযায়ী The Lord is the one who gives the gift of life এ জমা দেয়া হচ্ছে। গ্র্যাচুইটি রিজার্ভ ১.০৮ মিলিয়ন টাকা হ্রাস পেয়ে এখন ৪১.৬৬ মিলিয়ন টাকা হয়েছে। আয়কর সংরক্ষণের পরিমাণ ৬২.২৪ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬০৮.৫৪ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে।
০.৫৩ মিলিয়ন টাকায় কয়েকটি শেয়ার বিক্রির পর ক্রয় মূল্য অনুযায়ী শেয়ার বিনিয়োগের পরিমাণ বর্তমানে ৭১.৯৬ মিলিয়ন টাকা। ৭০ মিলিয়ন টাকা বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ সরকারি ট্রেজারি বন্ড ১২২.৬০ মিলিয়ন টাকা থেকে ১৯২.৬০ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ বেড়ে ৭৯২.৪৮ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং স্বল্পমেয়াদি সম্পদ গত বছরের তুলনায় ৪২.০৪ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭০০.৮০ মিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। নগদ এবং নগদ সমতুল্য ১,৫২৪.২৬ মিলিয়ন টাকা থেকে এ বছর ২১.০৮ মিলিয়ন টাকা কমে ১,৫০৩.১৮ মিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকে স্থায়ী আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু নগদ বহির্গমনের কারণে হাতে নগদ এবং ব্যাংকে নগদ অর্থ হ্রাস পেয়েছে।
কোম্পানীর চেয়ারম্যান সমাপনী বক্তব্য দেন এবং শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশ্যে বলেন, পিপলস্ ইন্সু্যূরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের ২০২৪ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৭৮৮.১৯ মিলিয়ন টাকা যা ২০২৩ সালে ছিল ৭৪৫.৯৯ মিলিয়ন টাকা, পূর্বের বছরের তুলনায় ৪২.২০ মিলিয়ন টাকা প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে পুনঃবীমা প্রিমিয়াম প্রদান ও গ্রহণের পর নীট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৪৯৫.০৮ মিলিয়ন টাকা যার বিপরীতে গত বছর ছিল ৪৩৬.৭৬ মিলিয়ন টাকা অর্থাৎ এ বছর ৫৮.৩২ মিলিয়ন টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশের উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গত ৪০ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় রিজার্ভ ও মোট সম্পদ যথাক্রমে ০.৬১ মিলিয়ন টাকা এবং ৪২.৪১ মিলিয়ন টাকা থেকে শুরু করে শেয়ারহোল্ডারগণের সর্বাত্মক সহযোগিতায় ২০২৪ সালের সমাপ্তিতে তা যথাক্রমে ৯৪৬.০৯ মিলিয়ন টাকা এবং ২,৯৯৬.৪৬ মিলিয়ন টাকা উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছে। বিগত বৎসরে কর্তৃপক্ষ বিচক্ষণতার সাথে কোম্পানীর কার্যক্রম পরিচালনা করায় শেয়ারহোল্ডারগণ সন্তোষ প্রকাশ করেন।