• বাংলা
  • English
  • বিবিধ

    খাল দখলে কেএসআরএম  ৫০ ফুটের খাল এখন ৩ ফুট নালা

    চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড জেলার বারবকুণ্ডে আম্বিয়াধলা খাল দখলের অভিযোগ উঠেছে কেএসআরএম নামের একটি ইস্পাত নির্মাণ কোম্পানির বিরুদ্ধে। এক সময় ৫০ ফুট চওড়া খালটি  এখন তিন ফুট সরু খালে পরিণত হয়েছে।

    সরেজমিনে দেখা গেছে, বারবকুন্ডের আম্বিয়াধলা পাহাড় থেকে নেমে নতুন পার্শ্ববর্তী গ্রাম সেবা ফিলিং স্টেশনের দক্ষিণ পাশ দিয়ে একটি খাল পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে; খালটি স্থানীয়দের কাছে ‘আম্বিয়াঢালা খাল’ নামে পরিচিত।

    পাহাড় থেকে নেমে আসা এই খালটি বারবকুন্ড ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের নাতুন পাড়া, হাছি নগর, বেড়া পাড়া, ইউসুফ আলী শাহ মাজার ও বড় দিঘী সংলগ্ন এলাকায় পানি চলাচলের একমাত্র পথ। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে খালটি প্রবাহিত হয় এবং গ্রামে জমে থাকা পানি সাগরে প্রবাহিত হয়। এটি বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে গ্রামবাসীদের মুক্তি দেয়। খালের আশেপাশের কৃষি জমির সেচও এই খালের ওপর নির্ভর করে।

    কিন্তু গ্রামের পানি চলাচলের প্রাণ শতবর্ষী এই খালটির সেবা ফিলিং স্টেশনের দক্ষিণ দিক পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম। তারা ইতোমধ্যে ওই খালের ৩০০ মিটার মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। ৫০ ফুটের খালটি সংকুচিত হয়ে ৩ ফুটের সরু নালায় পরিণত হয়েছে।

    শুধু তাই নয়, খালের ওপর নির্মিত মহাসড়কের সংযোগ সেতুটির মুখও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শতাধিক গাছপালা কেটে এসব ঢালপালা খালে ফেলে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

    স্থানীয়রা বলছেন, খাল দখল নিশ্চিত করতে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ খালে মাটি ও গাছের ঢাল ফেলছে। খাল দখল করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসন এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। বর্ষায় ডুবে মরা ছাড়া উপায় নেই।

    স্থানীয়রা বলছেন, শত বছরের পুরনো খালটিই একমাত্র  পানি চলাচলের একমাত্রপথ। বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢালের পানি এই খাল দিয়ে সাগরে পড়ে। কিন্তু কেএসআরএম খাল দখলে মরিয়া।

    শুধু খালই নয়, বারবকুণ্ডের আনোয়ারা এলাকায় অবস্থানের পর থেকেই কেএসআরএম দুর্দশা সৃষ্টিকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কবরস্থান ও রাস্তা দখলের অভিযোগ ছিল; বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, খাল দখল কার কি?  মানুষ কষ্ট পাবে। চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কোনো মাথাব্যথা নেই। সব কিছুতেই টাকা আর টাকা।’

    অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেএসআরএম ভূমি কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, “এখানে কোনো খাল দখল করা হয়নি। খালে যে মাটি পড়েছিল, তা আমরা সরিয়ে দিয়েছি। আপনারা গিয়ে দেখেন।’

    একপর্যায়ে কামাল উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে বললেন, ‘বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে, তাই না? পানি চলাচলের পথ হয়েছে তো  কী হয়েছে? আমি এখন কী করব? ইউএনও, চেয়ারম্যান, মেম্বার সবাই আছে। তারা জানে. ”এসময় খালের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ জানতেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কোনো ধারণা নেই।

    তখন সাবেক আনসার কমান্ডার ও কেএসআরএম-এর নিরাপত্তা ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম এক প্রতিবেদককে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। শহিদুল বলেন, “আপনি ঘটনাস্থলে আসেন। আমি বুঝিয়ে বলব এবং দেখাব।

    গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা নিরাপত্তা ইনচার্জের দায়িত্ব কিনা জানতে চাইলে শহিদুল বলেন, “অবশ্যই এটা আমার। আপনি আমার ম্যানেজারকে কল করেছেন। তিনিই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা আমার প্রতিষ্ঠান। তাই এটা আমার। ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমারও।

    জানতে চাইলে কেএসআরএমের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না এবং এটা আমার দায়িত্ব নয়।

    এ ব্যাপারে বারবকুন্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদকাত উল্লাহ মিয়াজী বলেন, খাল দখলের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এমনকি আমার কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। এভাবে পানি চলাচলের খাল দখলের সুযোগ নেই। জনদুর্ভোগ তৈরি করতে দেয়া যাবে না।গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

    এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেনখালটিতে মাটি সরিয়ে দেয়ার কথা।আমি ব্যবস্থা নিব।

    জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, “কেএসআরএম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। খালে মাটি পড়েছিল । সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল।

    মন্তব্য করুন